নাস্তিকদের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠছে পুরো বিশ্ব

আন্তর্জাতিক এক গবেষণা বলছে, বিশ্বের ৮৫টি দেশে ধর্মে অবিশ্বাসী বা নাস্তিকরা প্রচণ্ড বৈষম্য-নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন।

এর মধ্যে, গত এক বছরে অন্তত সাতটি দেশে নাস্তিকদের বিরুদ্ধে চরম নির্যাতন হয়েছে। এই দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে ভারত, পাকিস্তান, সৌদি আরব এবং মালয়েশিয়া।

ধর্ম বা সৃষ্টিকর্তায় অবিশ্বাসীদের জন্য ৩০টি সবচেয়ে বিপজ্জনক দেশের তালিকায় বাংলাদেশের নাম রয়েছে।

ইন্টারন্যাশনাল হিউম্যানিস্ট এ্যান্ড এথিক্যাল ইউনিয়ন (আইএইচইইউ) নামে একটি সংস্থার উদ্যোগে পরিচালিত গবেষণা প্রতিবেদনটি এ সপ্তাহে ইউরোপীয় সংসদে পেশ করা হয়েছে।

কোন কোন দেশ সবচেয়ে বিপজ্জনক?

গত এক বছরে নাস্তিকদের ওপর হামলা নির্যাতনের প্রসঙ্গে পাকিস্তান, ভারত, সৌদি আরব, সুদান এবং মালয়েশিয়ার নাম একাধিকবার এসেছে।

এপ্রিল মাসে, ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে এক বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রকে অন্য ছাত্ররা পিটিয়ে হত্যা করেছে।

তার কয়েক সপ্তাহ আগে, মালদ্বীপে এক ব্লগার, যিনি ধর্ম নিরপেক্ষতার স্বপক্ষে নিয়ে লেখালেখি করতেন এবং মাঝে মধ্যে ধর্ম নিয়ে কটাক্ষ করতেন, তিনি নিজের ঘরে ছুরিকাঘাতে নিহত হন।

সুদানে মোহামেদ আল দোসোগি নামে একজন মানবাধিকার কর্মী তার জাতীয় পরিচয় পত্রে মুসলিম পরিচয় বদলে নাস্তিক হিসাবে পরিচিত হতে চাইলে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

এরকম কয়েকটি উদাহরণ তুলে ধরে আইএইচইইউ বলছে – যে সব মানুষ ধর্ম, সৃষ্টিকর্তা এসব মানেনা, এসব নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে তাদের ওপর পৃথিবীর দেশে দেশে অত্যাচার, নির্যাতন, বৈষম্য বাড়ছে।

তাদের গবেষণা রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালে বিশ্বের ৮৫টি দেশে এই ধরণের নির্যাতন “চরমে পৌঁছেছে।

তার মধ্যে সাতটি দেশে – ভারত, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, মৌরতানিয়া, ভারত, পাকিস্তান, সুদান, সৌদি আরব – ধর্ম অবিশ্বাসীদের ধরে ধরে বিচারের মুখোমুখি করা হচ্ছে।

৩০টি সবচেয়ে বিপজ্জনক দেশের তালিকায় বাংলাদেশের নাম রয়েছে।

এই তালিকায় আরো রয়েছে মিশর, কাতার, আফগানিস্তান, ইরান ও ইরাক। এর মধ্যে ১২টি দেশে ধর্মত্যাগীদের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছ।

এই ৩০টি দেশেও গত এক বছরে নাস্তিক তকমা দিয়ে চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের অনেক ঘটনা ঘটেছে। বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হয়েছে, তথাকথিত ধর্ম অবমানকারীদের গুম করার ঘটনাও ঘটেছে।

পশ্চিমা দেশও ঝুঁকিমুক্ত নয়

যে সব দেশে নাস্তিকরা সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছে, সেগুলোর অধিকাংশই মুসলিম প্রধান দেশ।

কিন্তু কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রেও ধর্মে অবিশ্বাসী লোকজনের বিরুদ্ধে বৈষম্যের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

“বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে ধর্মে অবিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে ঘৃণা বা বৈষম্য সাধারণ ঘটনা,” বলছেন ব্রিটেনের কেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্ম বিষয়ক গবেষক ড লোয়া লি।

বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের তথাকথিত বাইবেল-বেল্টে নাস্তিকদের বিরুদ্ধে অসহিষ্ণুতা দিন দিন বাড়ছে।

গত এক বছরে ৮৫টি দেশে ধর্মে অবিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে নানা নির্যাতন বৈষম্যের ঘটনা ঘটেছে।

গত এক বছরে ৮৫টি দেশে ধর্মে অবিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে নানা নির্যাতন বৈষম্যের ঘটনা ঘটেছে

কেন এই প্রবণতা?

অনেক পর্যবেক্ষক মনে করছেন, এসব হত্যা নির্যাতনের খবর বেশি শোনা যাচেছ তার কারণ বিশ্বজুড়ে ধর্ম বিশ্বাস যত তীব্র হচ্ছে, তেমনি বহু মানুষ নতুন করে নিজেদের অবিশ্বাসী হিসাবে পরিচিত করছে। ফলে দ্বন্দ্ব বাড়ছে।

পিউ রিসার্চ সেন্টারের হিসাবে, ২০৬০ সালে সারা বিশ্বে নাস্তিক এবং ধর্মে অবিশ্বাসীদের সংখ্যা বেড়ে ১২০ কোটিতে দাঁড়াবে। তবে ধর্মে বিশ্বাসীদের সংখ্যা তার চেয়ে বেশি হারে বাড়বে।

(সুত্র : বিবিসি)