ইসলাম ধর্মের শাখা প্রশাখা

মুসলিম ধর্মের মধ্যে এত বিবেধ কেনো? মুসলিম ধর্মের মধ্যে কারা সঠিক?
নাকি সবাই সঠিক? কাফের ফতোয়া দেয় কারা?
বেদায়াতি মানে কি, বেদায়াত করে কারা?
ইসলামের মূল বিষয়ের সাথে ইজমা কিয়াসের সম্পর্ক কেমন? বর্তমানে ইসলাম ধর্ম পালন করে যেসব গোত্র বা সম্প্রদায় সেগুলো কি মূল ইসলামের চেয়ে ইজমা কিয়াসের প্রাধান্য বেশি?
কিছু প্রশ্নের উত্তর কখনই একক ভাবে পাওয়া যাবেনা। মানুষের ভিন্ন চিন্তা ও মতামতের কারনে একই কথা ও কাজ ভিন্নভাবে হবেই।

আজকে মতামত নয়, জানবো ইসলাম ধর্মের শাখা প্রশাখা নিয়ে।

-প্রথমে দেখি প্রধান শাখা- শিয়া, সুন্নি।

সুন্নির মধ্যে প্রকারভেদ—-

মাজহাব- প্রাথমিক সুন্নি মাযহাব হচ্ছে-

হানাফী, শাফিঈ, মালেকী, হাম্বলি। আরো একটি মাজহাব রয়েছে জাহিরী।

-“আছারি”। একটি ইসলামি পাণ্ডিত্যনির্ভর আন্দোলন, যা ৮ম শতাব্দীর শেষের দিকে উদ্ভূত হয়। এদের মধ্যেও অনেক আকিদা আছেযেমন:
-ছহীহ আকীদা,
-সালাফী আকীদা,
-সালফে সালেহীনদের আকীদা ইত্যাদি।

-“আশআরি”। আরব ধর্মতত্ত্ববিদ আবুল হাসান আল-আশআরি এই মতবাদের ব্যাখ্যাকারক। আশʿআরিবাদ সুন্নি ইসলামের সবচেয়ে প্রভাবশালী ধর্মতাত্ত্বিক চিন্তাধারা।

-“সুফিবাদ” (এখানেও নানা রকম তরিকা আছে)।

-“শরিয়ত”। আরবি ভাষায় শরীয়া বলতে পথ বোঝায়। এদের বক্তব্য শরীয়া বলবৎ হলে ব্যক্তি, মানুষ ও সমাজের সকল ক্ষেত্র শরীয়তের অনুশাসন অনুযায়ী পরিচালিত হবে।

এছাড়াও আছে
-তরীকত।
-মারিফত।
-ও হাকীকত। (এদেরেও আবার শাখা আছে)

-“রেজভী”। বেরলভী, যা বাংলাদেশে রেজভী নামে বেশি পরিচিত। এরা হল দক্ষিণ এশিয়ায় ২০ কোটির বেশি অনুসারীদের সুন্নি হানাফি মাযহাবের একটি আন্দোলন। ভারতের উত্তর প্রদেশের বেরেলি শহর থেকে এর সূচনা হয় তাই ভারতে এবং পাকিস্তানে বেরলভী বা ব্রেলভী নামে পরিচিত। কিন্তু বাংলাদেশে এরা রেজভী নামে বেশি পরিচিত। এরা আহমদ রেজা খান বেরলভী (১৮৫৬-১৯২১) এর অনুসারী।
(বাংলদেশে আহমেদ রেজা খান বেরলভীর অনুসারির সংখ্যা কম নয়, চট্টগাম বিভাগে এদের সংখ্যা বেশি দেখা যায়, পাকিস্তান ও ভারতে তার অনুসারির সংখ্যা অনেক। তারা সুফিবাদে বিশ্বাসি।)

-মাতুরিদী। এর প্রতিষ্ঠাতা হলেন আবু মনসুর আল-মাতুরিদি যিনি সংখ্যাগরিষ্ঠ সুন্নিদের মধ্যে ইতোমধ্যে বিদ্যমান আকীদাগুলোকে একটি সুসংবদ্ধ কালামশাস্ত্রীয় চিন্তাধারায় উপনীত করেন।

হানাফি মাযহাব থেকে দুটি কেন্দ্রের আবার উত্থান ঘটে। দুই দলেরই মতের পার্থক্য রয়েছে—

১/”মাদরাসাতুল ইরাকিঈন”। এর প্রধান ছিলেন আবু আল-হাসান আল-কারখী: বিবেচনা করা হয়ে থাকে যে এই কেন্দ্র ইমাম আবু হানিফা এবং তার প্রথম দিকের সঙ্গীদের অনুসৃত পদ্ধতির সম্প্রসারণরূপ।

২/”মাদরাসাতু সমরকন্দ”। এর প্রধান ছিলেন আবু মনসুর আল-মাতুরিদি। এই ধী-কেন্দ্রের বিশেষত্ব হল, এটি উসুলের বিষয়গুলিকে আকিদার বিষয়গুলির সাথে সম্পর্কিত করে, যা অবশ্য ইরাকি ধী-কেন্দ্র থেকে খানিকটা পার্থক্য এবং কিছুটা মত পার্থক্য।

মাজহাবের বাইরের…

যারা প্রচলিত চার মাযহাবের অনুসরণ করেন না তাদের -“লা-মাযহাবী”
-“গায়ের মুকালিদ”
-“মুহাম্মাদী”
-ছহীহ আকীদা,
-“সালাফী আকীদা,
-“সালফে সালেহীনদের আকীদা”
-“আহলে হাদিস” ইত্যাদি নামে অভিহিত করা হয়।

-“আহ্‌মদীয়া”। মির্যা গোলাম আহমদ (১৮৩৫-১৯০৮) দাবী করেছিলেন যে আল্লাহ তাকে আখেরী জামানার উম্মতের জন্য প্রেরণ করেছেন। তিনি নিজেকে পরিষ্কার ভাষায় নবী’ ও রাসূল’ হবার দাবীও করেছেন। তারও বহু অনুসারী রয়েছে, অনুসারী সংখ্যা ১০ মিলিয়ন বিশ্বব্যাপী।

-“আহলে কোরান যারা”। (শুধু কোরান মানে হাদিস মানেনা)।

-“ইবাদি ইসলাম”। এটি একটি শাখা যা ওমানে সবচেয়ে প্রভাবশালী। এছাড়া আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া, লিবিয়া ও পূর্ব আফ্রিকার বিভিন্ন অংশে এর অস্থিত্ব রয়েছে। মহানবী হজরত মুহম্মদের (স.) মৃত্যুর ২০ বছর পর শুরু হয় যা সুন্নি ও শিয়া মতবাদের চেয়েও প্রাচীন। (এরা কিন্তু শিয়া সুন্নির বাইরের লোক)

শিয়া–
যদিও শিয়া ইসলামের অসংখ্য শাখা ও উপদল রয়েছে, আধুনিক যুগে শিয়ারা প্রধান তিনটি দলে বিভক্ত:
-“ইসনা আশারিয়া”।
-“ইসমাইলি”।
-ও “জায়েদি”। ইসনা আশারিয়া বর্তমানকালে সর্ববৃহৎ ও সবচেয়ে প্রভাবশালী শিয়া উপদল। এছাড়াও অসংখ্য প্রশাখা রায়েছে।

বর্তমানে বাংলাদেশে
-মাজার পন্থী,
-পীর পন্থী,
-দেওয়ানবাগী পন্থী,
-আটরশি পন্থী,
-চরমোনাই পন্থী,
-তাবলীগ পন্থী,
-জামায়াত পন্থীদের মত এত ছোট ছোট শাখা করলে এই লেখা কোনদিন শেষ হবে না। মাজার ও ভান্ডারি পন্থীদের যেমন চরমোনাই মুসলিম হিসবে স্বীকৃতি দেয়না, তেমনি আটরশি আবার জামায়াতকে মুসলিম মনে করেনা। সে হিসবে সহী মুসলিম আপনি পৃথিবীর কোথাও পাবেন না।

-তা *লে *বা *ন,
-আইএসএস,
-বোকো হারাম সহ দেশি সংগঠন
-জামা’আতুল মুজাহিদিন (জেএমবি),
-হরকাতুল জিহাদ (হুজি),
-আনসারুল্লাহ বাংলা টিম (এটিবি),
-জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশ (জেএমজেবি), -শাহাদত-ই-আল হিকমা ও হিযবুত তাহীর।
এদেরকে আপনি মুসলিম মনে করেন?

বাংলাদেশের ৯০% সহীহ মুসলামানের মধ্য এরা কি আছে? সারা পৃথিবীর মুসলমানের কত পার্সেন্ট লোক সহীহ?
এর মধ্যে আপনি কোন দল?
আপনার দল সহীহ হলে আপনার মত অনুযায়ী সংখ্যাটা হবে নগন্য।
বাকি সবাই যখন আপনার মতামতকে স্বীকার করে না তখন কি আপনি রাগ করেন?
আপনি শুধু চালাক বাকি সবাই বোঁকা এমন ধারনা কি আপনার রয়েছে?
আপনিই যে সঠিক বাকি সবাই ভুল এটা নিশ্চিত হলেন কিভাবে? যে কোরানের জন্য আপনার জন্ম সেটা কি কখনও বুঝেশুনে একবারও পড়েছেন?

পুরো ঘটনা ও ভিন্ন ভিন্ন সম্প্রদায় নিয়ে লিখতে গেলে কয়েক লাখ পৃষ্ঠা লাগবে, তবে মূল বিষয় হচ্ছে বিবাধ। আমরা মুসলমানরা মনে হয়ে বিবাধ করতে ভালবাসি। সুন্নিরা যেমন শিয়াদের মসজিদে বোমা মারে পাকিস্তানে আফগানিস্তানে তেমনি ইরাকে ইরানে মারে সুন্নিদের।