মাধ্যমিক স্কুলে আমি অষ্টম শ্রেনীতে ভর্তি হলাম বরিশালে। প্রথম দিন স্কুলে গেলাম খুব আনন্দ নিয়ে। ইংরেজী সেকেন্ড পেপার ক্লাস চলছে। মতি স্যার ক্লাসে ঢুকেই বললেন কালকে যে প্যারাগ্যারাফ মুখস্থ করে আনতে বলছিলাম সেটা সবাই লেখো।
অনেকে খাতা কলম বের করে লিখতেছে আবার কেউ লেখার ভান করতেছে। আমি চুপচাপ বসেছিলাম।
স্কুলে আমি প্রথম দিন তাই স্বাভাবিক ভাবেই আমার জানার কথা না, গেল কাল স্যার কি পড়া দিয়েছিলো।
স্যার সবার খাতা জমা নিয়ে একজন একজন করে ডাকলেন। খাতা হাতে নিয়ে বললেন মুখস্ত বলো। যারা অল্প লিখছে এবং দেখে লিখছে তারা তো সব মুখস্ত বলতে পারেনি।
খাতা জমা দিয়েও যারা মুখস্ত বলতে পারেনি তাদের এক এক করে পেটানোর পর বললেন এবার যারা খাতা জমা দাওনি তারা দাড়াও, আমিও দাড়িয়ে গেলাম। সেকেন্ড বেঞ্চে বসা ছিলাম। ফার্স্ট বেঞ্চ থেকে দুইজনকে পিটিয়ে আমার সামনে আসার পর বললো হাত পাতো, আমি কিছু বলার আগেই অন্য ছাত্ররা বললো স্যার “ও আজকে নতুন এসেছে স্কুলে”। স্যার সবাইকে অবাক করে দিয়ে আমার দুই হাতে দুইটা করে চারটা বাড়ি দিয়ে বললো আজকে নতুন, তাই কম দিলাম!
স্যার ঠিকই বলেছিলেন, সবাইকে দশটা বারোটা করে বেতের বাড়ি দিয়েছে, আর আমাকে মাত্র চারটা।
সেই স্যারের চোখে চশমা ছিল কিন্তু উনি চশমার উপর দিয়ে তাকাতেন। একদম প্রকৃত স্যারের বর্ননা যেমন হয় উনি ঠিক তেমন ছিলেন। আরেকটা আশ্চর্য ব্যাপার হলো ওনার নাম মতি। জীবনে এমন ছাত্র খুব কম পাওয়া যাবে যাদের সাথে মতি স্যার নামে কারো দেখা হয়নি।
এই মতি স্যারদের জীবন একদম রসকষহীন। ওনাদের ওপর এখন আর রাগ হয়না, করুনা হয়।
প্রাইমারী স্কুল ও হাইস্কুলের শিক্ষকদের কাছ থেকে কিছুই শিখতে পারিনি। তাদের প্রধান কাজ ছিলো মুখস্থ করানো ও বেতের বাড়ি দেয়া। তবে বর্তমান সময়ে এসে কিছুটা পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে।